রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তরদাও :
কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। তিনি দেখিলেন, মেয়েটির বিবাহের বয়স পার হইয়া গেছে, কিন্তু আর কিছুদিন গেলে সেটাকে ভদ্র বা অভদ্র কোনো রকমে চাপা দিবার সময়টাও পার হইয়া যাইবে।
মেয়ের বয়স অবৈধ রকমে বাড়িয়া গেছে বটে, কিন্তু পণের টাকার আপেক্ষিক গুরুত্ব এখনো তাহার চেয়ে কিঞ্চিং ওপরে আছে, সে জন্যই তাড়া।
ক) ‘অপরিচিতা’ গল্পটি প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়? ১
খ) ‘কলি যে চারপোয়া হইয়া আসিল’- ব্যাখ্যা করো। ২
গ) উদ্দীপকের বরের বাবা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধি? আলোচনা করো। ৩
ঘ) উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে কী? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। ৪
উত্তর : ক) ‘অপরিচিতা’ গল্পটি প্রথম ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
খ) কনের বাবা শম্ভুনাথ বাবুর বিয়ে ভেঙে দেওয়াকে অনুপমের পরিবার কলিকালের আবির্ভারের লক্ষণ হিসেবে অভিহিত করেছে।
বিয়ের দিন অনুপমের মামা স্যাকরা দিয়ে বিয়ের গয়না যাচাই করে। এ বিষয়টি কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ বাবুর ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শম্ভুনাথ সেন কন্যা সম্প্রদানে অসম্মতি জানায়, যা তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় অকল্পনীয় ছিল।
গ) উদ্দীপকের বরের বাবা ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা চরিত্রের প্রতিনিধি।
যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। যৌতুকের করালগ্রাসে প্রতিনিয়ত বলি হতে হয় আমাদের সমাজের নিষ্পাপ নারীদের। নারীদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিবারের অভিভাবকদেরও নানামুখী বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। যৌতুকের মূলে রয়েছে সমাজে বসবাসকারী কিছু লোভী ও হীন মানসিকতার লোক।
উদ্দীপকের বরের বাবাও লোভী ও রক্ষণশীল। একদিকে মেয়ের বয়স নিয়ে তার আপত্তি আছে। অন্যদিকে যৌতুকের টাকার অঙ্কও সে অগ্রাহ্য করতে পারছে না। মেয়ের বয়স নিয়ে তাকে সমাজে হেনস্থা হতে হবে। এই ভয়ে সে ভীত; কিন্তু যৌতুকের পণের টাকার জন্য সে মেয়ের প্রকৃত বয়স লুকাতে প্রতারণা করতেও প্রস্তুত। পণের টাকার গুরুত্ব তার কাছে সব কিছুর ঊর্ধ্বে। আর এ কারণে কন্যার বয়স বেশি হওয়ায়ও বিয়ের জন্য বরের বাবার এত তাড়া।
‘অপরিচিতা’ গল্পেও আমরা দেখি যৌতুকের প্রতি লোভ ও রক্ষণশীল মনোভঙ্গি। কল্যাণীর বয়স বেশি জেনে অনুপমের মামার মন ভার হয়ে যায়; কিন্তু যৌতুকের টাকার লোভে সে বিয়েতে রাজি হয়। বিয়ে সম্পর্কে অনুপমের মামার একটি বিশেষ মত আছে। ধনীর কন্যা তার পছন্দ নয়। কন্যার বাবা গরিব হলেও তার যৌতুকের দাবি পূরণ করতে যে অস্বীকার করবে না এমন সম্বন্ধই সে অনুপমের বিয়ের জন্য চাইছিল। বিয়ের দিন স্যাকরা দিয়ে গয়না যাচাই করার বিষয়টি তার লোভী মানসিকতাকে প্রতিভাত করে। আর তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বরের বাবা ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামা চরিত্রের প্রতিনিধি।
ঘ) উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না। উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের মামার লোভী ও রক্ষণশীল মানসিকতা ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের বরের বাবা ও অনুপমের মামা দুজনেরই কনের বয়স নিয়ে আপত্তি ছিল। যৌতুকের লোভে তারা দুজনই বিয়েতে রাজি হয়। মেয়েদের বিয়ে নিয়ে তৎকালীন সমাজের মানসিকতার উন্মোচন এ গল্পের একটি দিক।
‘অপরিচিতা’ গল্পের মূল সুর নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার কাহিনি গল্পের নায়িকা কল্যাণী বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় থমকে যায়নি; বরং তাকে অনুপ্রাণিত করেছে তার স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠিত করতে, গল্পের শেষে আমরা দেখি কল্যাণীর এক নতুন মূর্তি দেশ সেবার ব্রতে কল্যাণী এক অতিমানবী হয়ে আমাদের ভাবতে শেখায়। ‘অপরিচিতা’ গল্পের এ মূল দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
এ গল্পের আরেকটি প্রধান দিক কন্যার বাবা শম্ভুনাথ বাবুর অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ, শম্ভুনাথ বাবু কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার চিরাচরিত লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে নিজের ও কন্যার আত্মসম্মানকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়টিও উদ্দীপকে প্রতীয়মান হয়নি।
আর তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের খণ্ডিত একটি চিত্রকে ধারণ করলেও সমগ্র ভাবকে ধারণ করে না।
No comments:
Post a Comment