Jan 31, 2019

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। তোমরা যারা ২০১৮ খিস্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা নিশ্চয়ই এখন অনেক ব্যতী-ব্যস্ত চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে। হ্যাঁ, এমনটি হওয়াই উচিত। শেষ ভালো যার সব ভালো তার। মোটেও অপচয় করা যাবে না এই শেষ সময়টুকু। এখনকার সামান্য অবহেলায় কিন্তু হতে পারে ‘তীরে এসে তরী ডুবানো’র মত অসামান্য ক্ষতি। তাই অন্য কোন দিকে ফিরানো চলবে না মনোযোগ। এখন পরীক্ষার চেয়ে বড় কোন আনুষ্ঠানিকতা নেই তোমাদের। আর এই আনুষ্ঠানিকতায় সফল হওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে, ঐকান্তিক ইচ্ছা নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করা।
লেখাপড়াই শিক্ষার্থীর প্রধান কাজ। যে প্রধান কজে সফল সে সবার কাছেই পুরস্কৃত। পৃথিবীতে বিদ্যাই হচ্ছে একান্ত নিজের ধন। এটি কেউ কেড়ে নিতে পারে না, বিলিয়ে দিলে কমে না, পালিয়ে চলে যায় না। সুশিক্ষা অর্জন ও প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ লাভ করতে পারে ইহ এবং পরকালের পরম শান্তি। তাই লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া চলবে না কখনো। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র- এই ব্রত নিয়ে সুশিক্ষা অর্জনে থকতে হবে আমরণ আন্তরিক।
মনে রাখতে হবে ‘বিশ্রাম কাজেই অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, নয়নের অঙ্গ যেমন নয়নের পাতা’। কাজের গতি ও উদ্যম বৃদ্ধির জন্য বিশ্রাম ও বিনোদন অপরিহার্য। আর এ সময়েই তুমি পড়ে বা শুনে নিতে পারো তোমাদের গুরুজনদের কিছু জরুরি উপদেশ। করে নিতে পারো উপাসনা। পূর্ণ করে নিতে পারো ঘুম। নিশ্চিত করতে পারো মন ও দেহের সুস্থতা। সে জন্যই থাকা চাই একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা বা রুটিন এবং সে মত সম্পাদন করা চাই দৈনন্দিন লেখাপড়া, নাওয়া-খাওয়া, উপাসনা, নিদ্রা, বিশ্রাম, বিনোদন। অবশ্য সারা বৎসর যারা নিয়মিত ক্লাস করেছো এবং প্রিয় শিক্ষক ও অভিভাবকগণের পরামর্শ অনুসারে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছো তাদের পরীক্ষা নিয়ে সামান্য চিন্তা থাকলেও দুশ্চিন্তার তেমন কোন কারণ নেই। অব্যাহত প্রচেষ্টার সুফল অভিসম্ভাব্য।
আর হ্যাঁ। পরীক্ষার আগে খুঁজতে যেওনা পরীক্ষার প্রশ্ন। এটি অন্যায় ও অনৈতিক। এতে বিনষ্ট হবে তোমার অর্জিত প্রস্তুতি, সৎ সাহস ও নীতি-নৈতিকতা। পরীক্ষার আগে পেয়ে যাওয়া প্রশ্ন যদি পরীক্ষায় না থাকে তো সেটি হবে তোমার পরীক্ষা খারপ হওয়ার প্রধান কারণ। কেননা, অসৎ উদ্দেশ্য সংগ্রহ করা এই প্রশ্নই ভুলিয়ে দিবে তোমার দুই বছরের কষ্টার্জিত প্রস্তুতি। নিশ্চিত ধ্বস নেমে আসবে তোমার পরীক্ষার ফলাফলে। ভেঙে চূড়মার হয়ে যাবে তোমার সকল উচ্চাশা। তুমি পরিণত হবে সকলের অবহেলার পাত্রে। অপরদিকে অসৎ উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা কোন প্রশ্ন যদি পরীক্ষায় থাকে এবং তুমি সেই অবৈধ সুবিধা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ভাল ফলাফল করো, তো সেই ভাল ফলাফল তোমার না। এতে আজীবন নিজের কাছে ছোট থাকবে তুমি। হারাবে মনের বল ও সৎ সাহস। বাড়তে থাকবে তোমার অযোগ্যতা। নিজের সন্তানকেও দিতে পারবে না সৎ উপদেশ। অবশ্যই কোন এক সময় তোমার মনে জেগে উঠবে এই পাপ/অপরাধ বোধ। তখন আর কোথাও ফিরিয়ে দিতে পারবে না অবৈধভাবে অর্জিত তথাকথিত ভাল রেজাল্ট। সেই রেজাল্ট দিয়ে যে কর্ম করবে, বৈধ হবে না সেই কর্মের উপার্জন। মহান সৃষ্টিকর্তাও শুনবেন না তোমার প্রার্থনা। সুতরাং কোনভাবেই মাথায় আনবে না প্রশ্ন ফাঁস করে বা নকল করে পরীক্ষায় ভাল করার অনৈতিক চিন্তা।
তোমরা নিজের উপর আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাও সুদৃঢ়ভাবে। মনের গভীরে উচ্চারণ করো- আমাকেও ভালো করতে হবে। আমিও পারবো। অন্যরা পারলে আমি পারবো না কেন? আমাকেও পারতে হবে। অবশ্যই আমি পারবো। অবশ্যই আমি পারবো। মনে রেখো, সব ভয়কে জয় করেই ছিনিয়ে আনতে হয় সকল সফলতা। জীবনের প্রতিটি কাজে জয়ী হওয়ার জন্য থাকা চাই আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস। দুশ্চিন্তার কোন সুফল নেই। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো সব দুশ্চিন্তা। এখন কাজ একটাই, পরীক্ষায় ভালো করা। ভালো ভাবে আয়ত্ত্বে রাখো প্রতিটি বইয়ের প্রত্যেকটি চ্যাপ্টারের সকল খুটিনাটি বিষয়/দিক গুলো।
তোমরা নিশ্চয়ই জানো, কারো সাজেশনে কেবল বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষায় ভালো করার দিন এখন আর নেই। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য তোমাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং আত্মস্ত করতে হবে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির সকল বিষয়। এমন অনেকেই অছো, যারা একসাথে অনেক কিছু মনে রাখতে পারো না বলে পরীক্ষায় খারাপ করার ভয়ে চিন্তিত। তোমরা স্যারের সহায়তায় বাছাই করে নাও গুরুত্বপূর্ণ ও সহজবোদ্ধ কয়েকটি অধ্যায়। খুব ভালো ভাবে আয়ত্ব করো অধ্যায় গুলোর সবকিছু। যেনো এই অধ্যায়ের যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তুমি। সহজেই তুলে নিতে পারো পাস নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর। শুধু পড়লেই চলবে না। লিখতেও হবে বারবার। মনে রেখো, একবার লেখা দশবার পড়ার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। পড়ে জেনে নাও বিস্তারিত। মুখস্ত করার চেয়ে উত্তম নিজের মত করে লিখতে শিখা। লিখ। মিলিয়ে দেখ। ভুল শুধরে নাও। আবার লিখ। আবার মিলিয়ে দেখ। ভাবো। আবার লেখ। দেখবে বইয়ের মতো হুবহু না হলেও সঠিক হয়েছে তোমার উত্তর। এতে লেখাপড়ায় পাবে অনেক আনন্দ আর পরীক্ষা নিশ্চিত পাবে অধিক নম্বর। আবারো বলছি, বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় বাছাই করা প্রশ্নের তৈরি করা উত্তর মুখস্ত করে বা নকল করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সচ্ছ ভাবে আত্মস্থ থাকা চাই নির্ধারিত চ্যাপ্টারের খুঁটিনাটি সবকিছু এবং সেই সাথে থাকা চাই যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্ভুল বানানে লেখার নিজস্ব ক্ষমতা। আশাকরি সবাই লিখতে পারবে সকল প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর এবং ভালো হবে তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল।
full credit
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

No comments:

Post a Comment